সোহেল রানা, মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি : ‘ধন ধান্য পুষ্প ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা’-কথাটির সার্থকতার খোঁজ মিলেছে দেশের উত্তর জনপদের খাদ্য ভাÐার খ্যাত নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ফসলের মাঠে। চলতি মৌসুমে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে বোরোর ক্ষেত দেখে মনে হবে এ যেন আবহমান বাংলার চিরাচরিত রূপ। দৃষ্টিসীমা ছাপিয়ে বাতাসে দোল খা”েছ বোরো ধানের সোনালী শীষ। আর এ দোলায় লুকিয়ে আছে হাজারো কৃষকের স্বপ্ন।
পোকামাকড় ও রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ ছাড়াই বেড়ে ওঠা ধানের শীষে ভরে গেছে মাঠ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা কোন বিপর্যয় না ঘটলে এ অঞ্চলের কৃষকদের বাড়ির আঙ্গিনা ভড়ে উঠবে সোনালী ধানের হাসিতে। বর্তমানে চলছে শেষ মহূর্তের পরিচর্যা। আগামী ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে পুরোদমে ধান কাটা-মাড়াই শুরু হবে। গৃর¯’ আর কৃষাণ-কৃষাণীরা এখন গোলা, খলা, আঙ্গিনা পরিষ্কার করায় ব্যস্ত। তাদের মনে দোলা দি”েছ অনাবিল আনন্দ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তরা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ৩০টি বøকে প্রত্যেক সপ্তাহে একদিন ক্ষেতের আইলে আলোক ফাঁদ পেতে ক্ষতিকর পোকার উপ¯ি’তি নিশ্চিত করে কৃষকদের বালাইনাশক প্রয়োগের পরামর্শ দি”েছ। এতে কৃষকরা সহজেই তাদের ফসল ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করছে। এদিকে, মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশজুড়ে আবারও শুরু হয়েছে লকডাউন। গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ রাক্ষুসে হয়ে উঠেছে ভাইরাসটি। সরকারও সংক্রমণ রোধে কঠোর অব¯’ানে। অন্যদিকে আগাম বন্যার আভাস। দ্রæত কাটতে হবে বোরো ধান। তবে এবার আর কৃষকদের শ্রমিক সংকটে পড়তে হবে না। গত বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাবে কৃষি বিভাগ। সেই সথে ব্যবহার করা হবে ‘কম্বাইন হারভেস্টার’ নামে কৃষিযন্ত্র, যা ৮০ জনের বেশি শ্রমিকের কাজ করতে সক্ষম।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাদেবপুর উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় এবার বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৬ হাজার ৬০০ হেক্টর। সেখানে আবাদ হয়েছে ২৮ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৭৭০ হেক্টর বেশি। বোরো চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রণোদনা হিসেবে বিনামূল্যে ৬৫০ জন কৃষককের প্রত্যেককে ৫ কেজি উন্নত জাতের ধানবীজ, ২০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার এবং ৬ হাজার ৭৫০ জন কৃষককে ২ কেজি করে উন্নত জাতের হাইব্রিড বীজ সরবরাহ করছে কৃষি বিভাগ।
উপজেলার শিবরামপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমন ধানের ভালো দাম পেয়েছি। সে জন্য বোরো ধান চাষ করছি। আশা করি বাজারে ধানের ভালো দাম পাওয়া যাবে।’ তিনি বলেন, ‘গত বারের চেয়ে এবার ধান ভাল হয়েছে। আর কয়েকদিন পর কাটা শুরু করা যাবে। ক্ষেতে রোগ-বালাই ও পোকা আক্রমণ করতে পারেনি। প্রকৃতি অনুক‚লে থাকলে স্বপ্নের সোনালী ধান যথাসময়ে ঘরে তুলতে পারবো।’ সিদ্দিকপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, ‘এ বছর তিন একর জমিতে বোরো আবাদ করেছি। আশা করছি বাম্পার ফলন হবে।’
মহাদেবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায় বলেন, ‘বাম্পার ফলন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করে আসছি। কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের পাশে থেকে বিভিন্ন সেবা দিয়ে আসছে। কৃষকরা যাতে কোন প্রকার সমস্যায় না পড়েন এ জন্য আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি। আশা করছি, বিগত মৌসুমের মতো এবারও বাম্পার ফলন হবে।’#
মো. সোহেল রানা, মহাদেবপুর-নওগাঁ, ১৬.০৪.২১, ০১৭১২৩৩৭২৮৩




কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন