সত্যের ডাকে

বাংলা অনলাইন নিউজপেপার, বাংলাদেশ

আপডেটস

Loading...
aviso | рекламный сервис

রবিবার, ২৮ মার্চ, ২০২১

মহাদেবপুরে কোন ক্রমেই থামছে না অবৈধ খননযন্ত্র দিয়ে বালু উত্তোলন


সোহেল রানা, মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি : আইন অমান্য করে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার বুক চিরে প্রবাহিত আত্রাই নদে অবৈধ খননযন্ত্র (ড্রেজার) বসিয়ে তলদেশে গভীর করে অবাধে বালু তোলা হ”েছ। এতে উপজেলার মহিষবাথান এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের সিসি (কংক্রিটের বøক) সহ বসত-বাড়ি এবং তীরবর্তী ফসলি জমি নদীতে ধসে পরছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে নদীর তীরে ভাঙন দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে তীরবর্তী বাসিন্দারা। মহিষবাথান এলাকায় বাঁধ ভাঙলে সরকারি খাদ্যগুদাম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্তত ৬-৭ টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তলিয়ে যাবে কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল। ভেসে যাবে মৎস্যচাষীদের রঙিণ স্বপ্ন। বালু খেকোরা কৃষকদের ভবিষ্যতকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দি”েছ বলে ¯’ানীয়দের অভিযোগ।
 বালুমহাল ও মাটি ব্যব¯’াপনা আইন ২০১০-এর ধারা ৫-এর ১ উপধারা অনুযায়ী, পাম্প, খননযন্ত্র (ড্রেজিং) বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূগর্ভ¯’ বালু বা মাটি উত্তোলন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ধারা ৪ এর (খ) অনুযায়ী সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারেজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেল লাইন ও অনান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি ¯’াপনা অথবা আবাসিক এলাকা হতে সর্বনি¤œ ১ কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিš‘ এ নদী থেকে বালু তোলার ক্ষেত্রে আইন মানা হ”েছ না। বালু উত্তোলন বন্ধে এলাকাবাসী প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েও তেমন কোনো প্রতিকার পায়নি।

নওগাঁ জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আত্রাই নদের মহাদেবপুর বালুমহালটি চলতি ১৪২৭ সনের জন্য ইজারা পেয়েছে মেসার্স তরফদার ট্রেডার্সের সত্ত¡াধিকারী উপজেলার শালগ্রাম গ্রামের এরশাদ আলীর ছেলে সাঈদ হাসান শাকিল।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বালুমহালটির মহিষবাথান থেকে পাঠাকাটা ঘাট পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকা থেকে খননযন্ত্র দিয়ে বালু তোলা হ”েছ। নদীর বিভিন্ন জায়গায় ড্রামের সাহায্যে অসংখ্য খননযন্ত্র ভাসিয়ে রাখা হয়েছে। বর্তমানে পানি কমে যাওয়ায় এসব যন্ত্রের মাধ্যমে দিন-রাত নদীর ৩০-৪০ ফুট গভীর থেকে বালু তোলা হ”েছ। প্রতিদিন কয়েক শত ট্রাক বালু বিক্রি করে বিশেষ একটি মহল হাতিয়ে নি”েছ লক্ষাধিক টাকা। মহিষবাথান এলাকায় সারি বেঁধে  ৬-৮টি খননযন্ত্র দিয়ে বালু উত্তোলন করায় সিসি বøক নদীতে ধসে পরছে। ওই গ্রামের কলোনী এলাকায় নদীর তীরবর্তী বাসিন্দাদের বসত-বাড়ি নদীতে বিলীন হ”েছ।
মহিষবাথান গ্রামবাসী জানায়, বালু লুটপাটের মহোৎসবে নদী পাড়ের বাসিন্দারা আতঙ্কিত হলেও সংশ্লিষ্টরা নিরব। বালু বহনকারী বেপরোয়া ট্রাক ও অবৈধ ট্রাক্টর চলাচলে ধুলো-বালি উড়ে রাস্তার দু’পাশের ঘর-বাড়ি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। হুমকির মুখে জনস্বা¯’্য। নষ্ট হয়ে যা”েছ রাস্তাঘাট।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, প্রশাসন ড্রেজার বন্ধে মাঝেমধ্যে অভিযান চালায়। তখন দু-এক দিন বালু তোলা বন্ধ থাকে। কিš‘ পরে আবার শুরু হয়। সংশ্লিষ্টদের সঠিক তদারকি না থাকায় ¯’ানীয় একটি প্রভাবশালী মহল খননযন্ত্র দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। ভয়ে এলাকার কেউ মুখ খুলতে সাহস করে না। ফলে বালু উত্তোলনকারীরা বেপরোয়া।
নাম প্রকাশে অনি”ছুক এক ড্রেজার (খননযন্ত্র) শ্রমিক বলেন, ‘নদী থেকে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ ট্রাক বালু তোলা হয়। মূল ইজারাদার বালুমহালের বিভিন্ন পয়েন্ট একাধিক ব্যবসায়ীর মধ্যে ভাগ করে দিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানোর আগেই ব্যবসায়ীদের কাছে খবর চলে আসে। তখন মেশিন বন্ধ রাখা হয়। অভিযানের পর আবারও বালু তোলা শুরু হয়।’

নদীর তীরবর্তী মহিষবাথান গ্রামের কলোনী এলাকার গৃহবধূ খোদেজা ও ডালি বলেন, ‘খননযন্ত্র বসিয়ে যেভাবে বালু তোলা হ”েছ তা অব্যাহত থাকলে তাদের গ্রাম বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দু’একটি বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বালু উত্তোলনে গ্রামবাসী বাধা দিলে নানাভাবে তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়।’ তারা বলেন, ‘২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে গ্রামবাসী ড্রেজার মেশিন ভাঙচুর করে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেয়। সে সময় ড্রেজার শ্রমিক ফরিদ হোসেন বাদি হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে মহাদেবপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছিলো। ৩ মাস বন্ধ থাকার পরে আবারও বালু উত্তোলন শুরু হয়।’
বালুমহালটির ইজারাদার যুবলীগ নেতা সাঈদ হাসান শাকিল বলেন, ‘নীতিমালা অনুসরণ করে বালু উত্তোলন করছি। শুষ্ক মৌসুমে নদীর তীর ভেঙে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। তবে বর্ষা মৌসুমে নদীর তীর কিছুটা ভেঙে যায়।’
 
মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মিজানুর রহমান মিলন বলেন, ‘একাধিকবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অবৈধ খননযন্ত্র বন্ধে আবারও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।’ এ ব্যাপারে মুঠোফোনে নওগাঁ জেলা প্রশাসক হারুন-অর-রশীদ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দ্রæত প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যব¯’া গ্রহণ করা হবে।’#
মো. সোহেল রানা, মহাদেবপুর-নওগাঁ


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Top Ad

Your Ad Spot