সোহেল রানা, মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি : নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার বুকচিরে প্রবাহিত এক সময়ের উত্তাল ‘আত্রাই নদী’ এখন শুধু নামেই নদী বাস্তবে পরিণত হয়েছে মরাখালে। অবৈধ খননযন্ত্র (ড্রেজার) বসিয়ে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন, মাটি খেকো সিন্ডিকেটের তাÐব ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এ নদী হারাতে বসেছে তার অস্তিত্ব। কয়েক বছর ধরে আত্রাই নদী খনন করা হবে, এ ধরনের কথা শোনা গেলেও বাস্তবে কিছুই হয়নি।¯’ানীয় সূত্রে জানা যায়, ভারতের শিলিগুড়ি থেকে উৎপন্ন হয়ে দেশের উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নওগাঁ ও রাজশাহী জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে যমুনা নদীর সাথে মিলেছে। আত্রাই নদীর উপরের অংশ করতোয়া ও নিচের অংশ বড়াল নদী নামে পরিচিত। এই নদী মোট ৩৮৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। এক সময় আত্রাই নদী দিয়ে তিস্তার পানি গঙ্গায় গিয়ে পড়ত। তবে ১৭৮৭ সালে আত্রাই নদীর সাথে তিস্তার সংযোগ বি”িছন্ন হয়ে পড়ে।
আত্রাই নদীতে এক সময় ঢেউয়ের তালে তালে চলাচল করেছে অসংখ্য পালতোলা নৌকা। ভাটিয়ালী আর পল্লিগীতি গানের সুরে মাঝিরা নৌকা নিয়ে ছুটে চলেছে বিভিন্ন জেলা-উপজেলার ব্যবসা কেন্দ্রগুলোতে। নৌকায় নানা কৃষিপণ্য নিয়ে সওদাগররা (ব্যবসায়ী) ছুটে চলতেন। এলাকায় গড়ে উঠেছিল অনেক হাটবাজার। শুধু হাটবাজার নয়, এ নদী কেন্দ্রিক গড়ে উঠেছিল অসংখ্য জনপদ। সে সময় নদীর অথৈ পানি দ্বারা কৃষকরা আত্রাই এর দু’পাড় জুড়ে ফল-ফসলে ভরে ফেলেছিলো। মাইলের পর মাইল জুড়ে সে কি এক নয়নাভিরাম দৃশ্য! বর্তমানে কৃষি জমিগুলো পরিণত হয়েছে ধু ধু প্রান্তরে। অফুরন্ত মাছের উৎস ছিল এ নদী। জীবিকার জন্য জেলেরা রাতদিন সমানে ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে মাছ ধরতেন। জেলেপাড়াগুলোও এখন প্রায় বিলীন। এককথায় থমকে গেছে নদী, আর নিভে গেছে বিপুল সম্ভাবনাময় কর্মযজ্ঞ। ড্রেজিং করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনলে আত্রাই ফিরে পেতো তার পূর্ণ যৌবন।
¯’ানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, সংশ্লিষ্টদের সঠিক নজরদারির অভাবে এক শ্রেণীর দখলবাজরা নদীর অনেক ¯’ান দখলে নিয়েছে। অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন ও পাড় কেটে মাটি বিক্রির প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে একটি প্রভাবশালী মহল। পাড় কেটে মহাদেবপুরসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলার ইটভাটায় মাটি নিয়ে যাওয়ার ফলে নদীর মূল সীমানাও হারিয়ে যা”েছ। এভাবে চলতে থাকলে এক সময়ের রতœগর্ভা এ নদীটি কোন এক সময় মানচিত্র থেকেই বিলীন হয়ে যাবে।
উপজেলার মহিষবাথান এলাকার আত্রই নদী পাড়ের বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, ‘কেউ এ নদী নিয়ে মাথা ঘামায়নি। এক সময়ের খরস্রোতা আত্রাই নদী রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হলে এটি অন্তত মরা খালে পরিণত হতো না।’
উপজেলা সদরের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আত্রাই নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা হাটবাজারগুলো প্রায় বিলুপ্তি ঘটেছে নদীর নাব্যতার মতো। সাথে সাথে হারিয়ে ফেলেছে জৌলুস।’ তিনি বলেন, অনেকে বর্জ্য ফেলে দূষণ করাসহ নদীর তলদেশ ভরাট করছেন। অনেকে আবার যত্রতত্র থেকে বালু উত্তোলন ও পাড় কেটে মাটি বিক্রির প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফউজ্জামান খান বলেন, ‘নদী রক্ষার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে। দ্রæত আত্রাই নদীর ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হবে।’ মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মিজানুর রহমান মিলন বলেন, ‘বর্তমান সরকার নদীবান্ধব সরকার। নদী রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যব¯’া গ্রহণ করা হবে।’
মো. সোহেল রানা, মহাদেবপুর-নওগাঁ



কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন