সত্যের ডাকে

বাংলা অনলাইন নিউজপেপার, বাংলাদেশ

আপডেটস

Loading...
aviso | рекламный сервис

সোমবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

ঐতিহ্যের বিরল দৃষ্টান্ত! নওগাঁর মহাদেবপুরে ১০৮ কক্ষের ‘মাটির প্রাসাদ

 


সোহেল রানা, মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি : নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার নিভৃত পল্লী আলিপুর গ্রাম। যেখানে গত ৩৩ বছর আগে শখ করে তৈরি করা হয়েছিল ১০৮ কক্ষ বিশিষ্ট দ্বিতল মাটির ঘর। প্রতিদিন বিভিন্ন ¯’ান থেকে ঘরটি দেখতে আসছেন দর্শনার্থীরা। বাড়িটি সংরক্ষণ করা গেলে দর্শনীয় ¯’ান হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন সচেতনরা।

¯’ানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার মহাদেবপুর উপজেলার চেরাগপুর ইউনিয়নের আলিপুর গ্রাম। নওগাঁ শহর থেকে উত্তর-পূর্বদিকে গ্রামটির দূরত্ব প্রায় ২২ কিলোমিটার এবং মহাদেবপুর উপজেলার সদর থেকে দক্ষিণ-পূর্বে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে অব¯ি’ত। নওগাঁ-মহাদেবপুর আঞ্চলিক সড়কের তেরমাইল নামক মোড় থেকে পশ্চিমে পাঁচ কিলোমিটার দূরে পিচঢালা পথ পেরিয়ে যেকোনো যানবাহনে যাওয়া যাবে ওই গ্রামে। যেতেই রাস্তার ডানপাশে যে কারো নজর কাড়বে বিশাল রং করা কালো বাড়িটি। তবে পাকা রাস্তা থেকে ১০০ ফুট দূরে পুকুর আর সেই পুকুরের উপরে কাঙ্খিত বাড়ি। দর্শনার্থীদের আসার সুবিধার জন্য কয়েক মাস আগে পাকা রাস্তা থেকে বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ২০০ ফুট হিয়ারিং রাস্তাও তৈরি করা হয়েছে।
১৯৮৬-৮৭ সালে এ গ্রামের সম্পদশালী দুই সহোদর সমশের আলী মন্ডল ও তাহের আলী মন্ডল প্রায় ৯ মাস সময় নিয়ে ১০৮ কক্ষ বিশিষ্ট মাটির দ্বিতল ঘর তৈরি করেন। বাড়িটি ৩ বিঘা জমির উপর নির্মিত। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০০ ফুট এবং প্র¯’ ১০০ ফুট। মাটি, খড় ও পানি দিয়ে কাঁদায় পরিণত করে ২০-৩০ ইঞ্চি চওড়া করে দেয়াল তৈরি করা হয়েছে। যেখানে বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৮০ জন কারিগর দিয়ে বাড়িটি সম্পূর্ণ করতে সময় লেগেছিল প্রায় ৯ মাস।
এই বাড়িটি তৈরিতে পশ্চিমপাশে একটি পুকুর খনন করা হয়েছে। আর ছাউনির জন্য টিন লেগেছে ২শ’ বান। দোকানদার খুশি হয়ে দুই ভাইকে একটি চায়না ফনেক্স বাইসাইকেল উপহার দিয়েছিলেন। বাড়িসহ আশপাশের জমি রয়েছে প্রায় ২১ বিঘা। বাড়িটির সৌন্দর্য বাড়াতে চুন ও আলকাতরার প্রলেপ দেয়া হয়েছে। মাটির এই বাড়িটি দেখতে অনেকটা প্রাসাদের মতো। বাড়িটির নাম ‘মন্ডল ভিলা’ হলেও বর্তমানে ‘নওগাঁর মাটির প্রাসাদ’ নামে পরিচিতি পেয়েছে।

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য মাটির বাড়ি মানুষের কাছে গরিবের ‘এসি’ হিসেবে খ্যাত। মাটির বাড়িতে শীত ও গরমের সময় বেশ আরামদায়ক। এক সময় গ্রামের বিত্তশালীরাও অনেক অর্থ ব্যয় করে মাটির বাড়ি তৈরি করতেন। যা কিছু কিছু এলাকায় এখনও চোখে পড়ে। তবে ইট, বালি ও সিমেন্টের এ আধুনিকতায় অনেক মাটির বাড়ি এখন বিলীনের পথে।
বাড়ির ভেতরে গিয়ে এক কোনে দাঁড়িয়ে থেকে সবঘর দেখা যেত এবং এক দরজা দিয়ে সব ঘরে যাওয়া যেত। বিশাল এই বাড়িতে প্রবেশের দরজা রয়েছে ১১টি। তবে প্রতিটি ঘরে রয়েছে একাধিক দরজা। দোতলায় উঠার সিঁড়ি রয়েছে ১৩টি। বাড়ির মালিক সমশের আলী মন্ডল ও তাহের আলী মন্ডল গত কয়েক বছর আগে মারা গেছেন।
তারা মারা যাওয়ার পর ছেলেরা ভাগ করে নিয়েছে। বাড়ির ভেতরের ফাঁকা অংশেও তৈরি করা হয়েছে আরেক বাড়ি। বর্তমানে বাড়ির শেষ অংশে ইট দিয়ে কিছু আধুনিকায়ন করা হয়েছে। ফলে আগের মতো বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে আর সব ঘর দেখা যায় না এবং সব ঘরেও প্রবেশ করা যায় না। বিশাল এই বাড়িতে ছোট বড় সবাই মিলে বর্তমানে ৪০ জন মানুষ বসবাস করছে।

জেলার পতœীতলা উপজেলার আমন্তঝুকি গ্রামের মিজানুর রহমান, আফসার আলী ও মান্দা নিচকুলিহার গ্রামের শিক্ষক মহসিন আলী বলেন, তারা অনেকদিন থেকে বাড়িটির নাম শুনেছে, কিš‘ কখনো দেখার সৌভাগ্য হয়নি। গত ঈদের ছুটিতে সময় করে বেড়াতে গেছিলেন। তবে এতবড় বাড়ি জেলার কোথাও তারা দেখেননি। দেখেই বোঝা যা”েছ সেই সময় খুব যতœ করে চুন ও আলকাতরা দিয়ে রং করে তৈরি করা হয়েছে। সংরক্ষণ করা গেলে দর্শনীয় ¯’ান হয়ে উঠতে পারে।

মরহুম তাহের আলী মন্ডলের স্ত্রী গৃহকর্তা হালিমা বেগম বলেন, গত কয়েক বছর থেকে বাড়িটি দেখার জন্য প্রতিদিন বিভিন্ন ¯’ান থেকে মানুষ আসছেন। ঈদের সময় দিনে কয়েক হাজার মানুষের আনাগোনা হয়।
তিনি বলেন, গৃহকর্তারা মারা যাওয়ার পর ছেলেরা বাড়িটি ভাগ ভাগ করে নিয়েছে। এখন এক দরজা দিয়ে আর অন্য ঘরে যাওয়া যায় না। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় অনেকে বাড়ির বাইরে গিয়ে বাড়ি করে বসবাস করছে।##
মো. সোহেল রানা, মহাদেবপুর-নওগাঁ, ০৮.০২.২১, ০১৭১২৩৩৭২৮৩

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Top Ad

Your Ad Spot